সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি - কিসে হয় সাইবার অপরাধ
অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করলে সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি হতে পারে। এই পোস্টে সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি এটি নিয়ে বলা হবে। কটুক্তি বা মানহানিকর ছবি বিকৃত করে এমন অপরাধীর জন্য সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি তা এই পোস্টের মাধ্যমে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে বুঝতে পারবেন।
বর্তমান সময়ে এটি ব্যাপক বিস্তার লাভ করার ফলে দিন দিন অপরাধীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই এই অপরাধের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা ও কঠোর আইন প্রয়োগের জন্য নির্দেশ রয়েছে। যদি কেউ জেনে বা না জেনে অনলাইন ব্যবহার করে কোন গুরুতর অপরাধ মুলক কোন কাজ করে থাকেন, যা সাইবার বুলিং এর অন্তর্ভুক্ত, তার জন্য সেই ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
পেজ সূচিপত্র
- সাইবার বুলিং এর হার
- কিসে হয় সাইবার অপরাধ
- সাইবার বুলিংয়ে ফেঁসে গেলে কি করবেন
- সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি
- সাইবার বুলিং থেকে কি নারীদের মুক্তি নেই
- সাইবার বুলিং এর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ
- শেষকথা
সাইবার বুলিং এর হার
সাইবার বুলিংয়ের শিকার তুলনামূলকভাবে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার একান্ন শতাংশ লোক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন কোন কাজ করলে সাইবার অপরাধ হয় এবং সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি কি তা না জানলে আপনিও হয়তো সাইবার বুলিংয়ের হেনস্থার স্বীকার হয়ে থাকবেন।
যদি আপনি ইউনিসেফ এর জরিপ খেয়াল করেন, তাহলে দেখতে পাবেন বাংলাদেশের সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া লোকের সংখ্যা কত শতাংশ রয়েছে। শুধুমাত্র ঢাকায় সাইবার বুলিং এর সংখ্যা সত্তর শতাংশেরও বেশি। এর মধ্যে নারীদের বয়স পনেরো থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মিষ্টি কুমড়া বীজের উপকারিতা
অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীরা এই সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে থাকেন। এছাড়াও পুরুষরা শারীরিক গঠন, ধর্ম এবং পেশার কারণে প্রতিনিয়তই সাইবার বুলিং এর শিকার হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত প্রতিবেদন অনুযায়ী সাইবার বুলিং এর উদ্বেগ যেমন বেড়ে চলেছে। ঠিক তেমনি অধিকাংশ নারী সাইবার বুলিংয়ের কবল থেকে বাঁচতে পারছে না।
এছাড়াও জরিপ মোতাবেক ষাট শতাংশ মানুষ কোন না কোনভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও সাইবার বুলিংয়ের হয়রানির কবলে পরে থাকেন। সাইবার বুলিং ব্যাপকভাবে সচেতন করার জন্য স্টপ সাইবার বুলিং ডে প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় শুক্রবার পালন করা হয়ে থাকে।
কিসে হয় সাইবার অপরাধ
সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি তা জেনে নিয়ে সাইবার অপরাধ এমন একটি বিষয় যা একজন ভিকটিমকে এমন ভাবে ক্ষতি করে থাকে যে সে মানসিকভাবে বিপর্যয় বোধ করতে থাকে খুব সহজে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে না। কিসে হয় সাইবার অপরাধ চলুন জেনে নিই।
- অন্য কারও নামে বিভ্রান্তিকর কোন পোস্ট যদি দেয়া হয়।
- মিডিয়া বা ফেসবুকের মাধ্যমে কাউকে সম্মানহানী করা বা মানহানি কর অবস্থায় রাখা।
- কারো গোপন ছবি ও ভিডিও তার অনুমতি ব্যতীত আপলোড করার ফলে সাইবার অপরাধ হয়।
- যদি অন্য কারো নামে অ্যাকাউন্ট খুলে বিভ্রান্তি মূলক কোন পোস্ট দিয়ে ফেলেন।
- অথবা কোন স্ট্যাটাস শেয়ার বা লাইক দিলেও সাইবার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
- ইলেকট্রনিক কোন মাধ্যম ব্যবহার করে হুমকি দিলে সাইবার অপরাধ হবে।
- অশালীন কিছু পাঠিয়ে যদি বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
- দেশ বিরোধী যদি কোন কাজ করে থাকে তাহলে সেটি সাইবার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
- ইলেকট্রনিক যেকোনো ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে হ্যাকিং করলে সাইবার অপরাধ হয়।
- কারো অনুমতি না নিয়ে কোন ডিভাইসে প্রবেশ করলে অথবা ভাইরাস ছড়িয়ে দিলে সাইবার অপরাধ হতে পারে।
- এগুলো ছাড়াও অনলাইন মাধ্যমে আপনি যদি অন্য যেকোনো ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকেন তাহলে সেটি সাইবার অপরাধ হয়ে থাকে।
সাইবার বুলিংয়ে ফেঁসে গেলে কি করবেন
যদি আপনি কখনো সাইবার বুলিংয়ে ফেঁসে যান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে এই ব্যাপারে অধিক সতর্ক হতে হবে। যিনি সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে গিয়েছেন তাকে অবশ্যই সেই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নিতে হবে। যিনি ভিকটিম তিনি নিকটতম থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করে আসতে পারেন।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ অফিস অর্থাৎ বিটিআরসিতে লিখিতভাবে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে পারেন। কেউ যদি আপনাকে মিথ্যা ভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করে, তাহলে সেইক্ষেত্রে আপনি কিছুটা হলেও সুরক্ষিত থাকবেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক যে আইন রয়েছে সেই আইনের আওতায় এজাহার দায়ের করতে পারেন।
আপনাকে যদি কেউ হ্যাক করার চেষ্টা করে অথবা ফেসবুকের মাধ্যমে আপনাকে বিরক্ত করে থাকে, আপনার ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য চুরি করে ফেলে অথবা গোপনীয় কোন তথ্য সোশ্যাল মিডিয়াতে ফাঁস করে দেয়, তাহলে সাইবার অপরাধ এর বিধান কি তা জেনে খুব শীঘ্রই আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এইক্ষেত্রে আপনাকে নিকটস্থ থানায় যেয়ে লিখিতভাবে জানিয়ে আসতে হবে। যদি কোনভাবে মিথ্যা উপায়ে সাইবার অপরাধের অভিযোগে কেউ ফেঁসে যান, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বিষয়টি খুলে বলতে হবে যে, আপনাকে কিভাবে ফাঁসানো হয়েছে এবং আপনি কিভাবে এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গিয়েছেন।
আর যখনই আপনাকে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, তখন আদালতে যেয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করার চেষ্টা করবেন। যেহেতু অনেক ক্ষেত্রে আইনের বিভিন্ন ফাঁক ফোকরের ব্যবহার রয়েছে, সেইক্ষেত্রে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।
কারণ আইনের আশ্রয় নিলেও আপনাকে সচেতন থাকতে হবে, যেন কোন রকমের ফাঁদে পড়ে না যান। তাই সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি তা জেনেও সাইবার বুলিং এর ফাঁদে ফেঁসে গেলে আপনাকে মানসিকভাবে খুব ধৈর্য সহকারে এই সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে।
সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি
ডিজিটাল প্রযুক্তির এই যুগে কেউ যদি কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে অন্য কারো ক্ষতিসাধন করে থাকে বা ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে যদি কারো ক্ষতি করা হয় তাহলে সেই সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি হতে পারে? অথবা ইমেইলের মাধ্যমে যদি কাউকে বিব্রতকর কিছু পাঠানো হয় অথবা ডিভাইসে ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়া হয় তার শাস্তি কি তা জেনে নিন-
১। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক আইনে ৫৪ ধারা অনুযায়ী যেই সকল অপরাধগুলো হয়ে থাকে তার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি চৌদ্দ বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদণ্ড এবং সাথে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়ে থাকে।
২। এছাড়াও ছাপ্পান্ন ধারায় যদি কেউ অন্য কারোও ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে এমন ধরনের কোন কাজ করে থাকে। যা কম্পিউটার রিসোর্সের ক্ষেত্রে তথ্যগুলো বাতিল হয়ে যায়। সেইক্ষেত্রে কম্পিউটারের সার্ভার বা নেটওয়ার্কের ইলেকট্রনিক্স সিস্টেম যদি অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করে।
তাহলে সেটি হ্যাকিং যুক্ত অপরাধের মধ্যে গণ্য হয়। যার শাস্তি সর্বোচ্চ চৌদ্দ বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদণ্ড এবং সাথে এক কোটি টাকাও জরিমানা করতে পারে।
৩। সাইবার অপরাধের সাত ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে কোন ধরনের মিথ্যা বা অশ্লীল কিছু প্রকাশ করে দেয়। মানহানিকর কোন বিষয় সংঘটিত হয়, তাহলে সেইগুলো সাইবার অপরাধের অন্তর্ভুক্ত হবে।
কিসে হয় সাইবার অপরাধ এবং সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি তার সর্বোচ্চ চৌদ্দ বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদণ্ড হয়ে থাকে এবং সেই সাথে এক কোটি টাকা পর্যন্তও জরিমানা করতে পারে।
সাইবার বুলিং থেকে কি নারীদের মুক্তি নেই
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভিকটিমের ছবি ও পরিচয় যদি প্রকাশ হয়ে যায়। তাহলে ভুয়া আইডি ব্যবহার করার মাধ্যমে ছবি অথবা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ হয়ে যায়। যদি কোন কারণে আইডি হ্যাক হয়ে যায় অথবা পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে যায়।
পর্নোগ্রাফির বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করার মাধ্যমে যদি মেসেজিং এ কাউকে বিব্রত করা হয়। তাহলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কিশোর কিশোরীরা বিভিন্নভাবে হেনস্থা হতে পারে। যার ফলে সাইবার বুলিং থেকে নারীদের মুক্তি পাওয়াটা খুবই কঠিন হয়ে যায়।
স্কুল, কলেজে অনেক সময় দেখা যায় ছাত্রীর কোন আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করে দেয়। এই ছবিগুলো দিয়ে পরবর্তীতে হুমকি দিতে থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের ভয় দেখায়। সমাজে এই ধরনের সমস্যা প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। ছবি ও পরিচয়কে গোপন করার মাধ্যমে ভুয়া আইডি দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করা।
সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি তা না জানার ফলে পূর্ব পরিচয় বা সম্পর্কের কোন জের ধরে কোনভাবে পাওয়া ছবিকে দেখিয়ে প্রকাশের হুমকি দিতে থাকে। পরবর্তীতে এর জন্য টাকা বা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা আদায় করার চেষ্টা করতে থাকে। এই ধরনের সমস্যার শিকার প্রতিনিয়ত চলেছে এবং পাশাপাশি যৌন হয়রানেরও অনেক অভিযোগ বাড়ছে।
সাইবার অপরাধকে দূর করতে হলে নারীদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। যেহেতু দেশে ডিজিটাল আইন রয়েছে, সেই অনুযায়ী সাইবার বুলিং ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাহলে প্রতিনিয়ত ভুগতে থাকা এই ধরনের সাইবার বুলিং থেকে ভিকটিম খুব সহজেই মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে।
সেইসাথে সমাজের প্রত্যেক মানুষকে এই সাইবার আইন মেনে চলে সাইবার বুলিং প্রতিরোধ করতে হবে। কিসে হয় সাইবার অপরাধ তা জেনে সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে যেন কেউ সহজেই সাইবার বুলিং করতে না পারে। এইভাবে ধীরে ধীরে সাইবার বুলিং থেকে নারীদের বেরিয়ে আসার সুযোগ করে দিতে হবে।
সাইবার বুলিং এর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ
সাইবার বুলিং এমন একটি অপরাধ যেটির জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হয়। যার জন্য পুলিশ কাউন্টার, টেরোরিজম ইউনিট এবং র্যাবসহ বিভিন্ন ধরনের ইউনিটকে এই সাইবার বুলিং এর বিষয়ে কাজ করতে হয়।
পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন এর মাধ্যমে সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি তা জেনে ফেসবুক পেজে আপনি চাইলে আপনার তথ্যগুলো সংগ্রহ করে অভিযোগ দিতে পারেন। যেহেতু এই সেক্টরে নারী সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে, তাই আপনার ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
এখানে বাংলাদেশ পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন কাজ করে থাকে। এছাড়াও সাইবার পুলিশ সেন্টার, হ্যালো সিটি অ্যাপস, রিপোর্ট টু র্যাব অ্যাপস এর মাধ্যমেও অভিযোগ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। যেটি আপনাকে সাইবার বুলিং এর বিরুদ্ধে কাজ করতে সাহায্য করে থাকে।
শেষকথা
আশা করছি এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি সাইবার বুলিং এর শাস্তি কি এবং কিসে হয় সাইবার অপরাধ এই বিষয়গুলো নিয়ে খুব ভালোভাবে জেনে নিতে পেরেছেন। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আশেপাশের বন্ধুদের শেয়ার করে পোস্টের নিচের অংশে মন্তব্য করুন। ২৫২৭৫
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url